বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের হাওরে এবার চলতি বছর বাম্পার বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে।
তবে কৃষক পর্যায় থেকে গতবারের তুলনায় এবার ধানসংগ্রহ করা হচ্ছে অনেক কম। কৃষক পর্যায় থেকে সহজে আরো বেশি ধান সংগ্রহ করার দাবি থাকলেও সরকার এবার বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। এখন অনুকূল আবহাওয়ায় বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। সরকার চলতি বছর জেলা থেকে মাত্র মাত্র ১৪ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে। তবে এখনো এক তৃতীয়াংশও সংগ্রহ হয়নি বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার হাওরে চলতি বছর প্রায় ১৪ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার ২শ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষক পর্যায় থেকে দেড় টন করে আগে আসলে আগে নেওয়ার ভিত্তিতে দেড় টন করে ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। জনপ্রতি ১ হাজার ৪৪০ টাকা মণ দরে এই ধান আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যাবে।
সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার পর্যন্ত জেলায় ৪ হাজার ৭৭২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় ১ হাজার ৩৩ টন ধানের মধ্যে ৬২৮ মে.টন, শান্তিগঞ্জে ১ হাজার ৫১২ মে. টনের মধ্যে ৫৯১ মে.টন, দোয়ারাবাজারে ৮০২ মে.টনের মধ্যে ৪২২ মে.টন, ছাতকে ৯৪৫ টনের মধ্যে ৩৩৮ মে.টন, জগন্নাথপুরে ১হাজার ৩১২ মে.টনের মধ্যে ৬১৭ মে.টন, দিরাইয়ে ২ হাজার ৫৫ টনের মধ্যে ৫১০ মে.টন, শাল্লায় ১ হাজার ৫ ২৪ টনের মধ্যে ১৭২ মে.টন, ধর্মপাশায় ১ হাজার ৩৫ টনের মধ্যে ১৯৩ মে.টন, মধ্যনগরে ১ হাজার মে.টনের মধ্যে ১৩৮ মে.টন, জামালগঞ্জে ১ হাজার ৬৩৩ টনের মধ্যে ৬২৩ মে.টন, তাহিরপুরে ১ হাজার ৮৮ টনের মধ্যে ২৫২ মে.টন ও বিশ্বম্ভরপুরে ৬৫৬ মে.টনের মধ্যে ২৮৩ মে.টন সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রতিটি উপজেলায় খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কম থাকায় কৃষকরা বলছেন দুর্গম এলাকা থেকে ধান নিয়ে এসে গুদামে দিতে কৃষকদের খরচ বেশি পড়ে। এ কারণে ও মূল্য কম থাকায় গুদামে কৃষকরা ধান দিতে তেমন আগ্রহী নন বলে তারা জানান।
শাল্লা উপজেলার বাহাড়া গ্রামের বড়ো কৃষক রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের গ্রাম থেকে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে আমাদের পরিবহন খরচ পড়বে বেশি। নৌকা, গাড়ি ও শ্রমিকের ভাড়া দিতে গিয়ে মণপ্রতি প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়। তাই আমাদের এলাকার কৃষকরা গুদামে গিয়ে ধান দিতে আগ্রহী নন। তবে সরকার যদি কৃষকের বাড়ি বা ওয়ার্ড পর্যায় থেকে ধান সংগ্রহ করে তাহলে অনেক কৃষক ধান দিতে আগ্রহী হবেন।
একই উপজেলার নোওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক পিযুষ দাস বলেন, আমি প্রতি বছর ৫-৭শ মণ ধান পাই। এবারও বাম্পার ফলন পেয়েছি। তবে আমাদের এলাকার কোন কৃষক গুদামে গিয়ে ভোগান্তি পেয়ে ধান দিতে চায় না। দুর্গম এলাকা হিসেবে গুদামে ধান দিতে গিয়ে আমাদের পোষায় না। তাই আমাদের গুদামে সবসময় ধান সংগ্রহ কম হয়।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি ওয়ার্ড পর্যায় থেকে ধান সংগ্রহ করার জন্য। তাছাড়া কৃষক পর্যায় থেকে আরো বেশি ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো জন্য। সরকার এসব করছেনা। যার ফলে দুর্গম হাওরের গুদামগুলোতে ধান সংগ্রহ কম হয়। এতে আমাদের কৃষক বঞ্চিত থাকছে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সরকারি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমাদের প্রতিটি গুদামের সংশ্লিষ্টরা গুনাগুণ বজায় রেখে ধান সংগ্রহ করছেন। কোনোভাবেই আমরা কৃষকদের হয়রানি মেনে নেবনা। কৃষকরা যাতে সহজে গুদামে এসে ধান দিতে পারেন সেদিকে আমাদের লক্ষ আছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম
যাতায়াত বিড়ম্বনায় গুদাম বিমুখ হাওরের কৃষক
- আপলোড সময় : ২৬-০৫-২০২৫ ০২:৪১:৫৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৫-২০২৫ ০২:৪৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ